http://bdwedding.blogspot.com/


স্মার্টফোন বাজারে দিন দিন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিছুদিন পর পর এ আসছে নতুন নতুন সব অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস। আর এইসব ডিভাইস এ থাকছে নতুন নতুন সব ফিচার। প্রতিদিন অ্যান্ড্রয়েড পরিবার এ যোগ হচ্ছে নতুন মুখ। যারা নতুন ইউজার তাদের মনে জেগে উঠে নানা প্রশ্ন। আর এরকম কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আমাদের আজকের পোস্ট…

১) অ্যান্ড্রয়েড কি ?

অ্যান্ড্রয়েড হল লিনাক্স এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা একটি অপারেটিং সিস্টেম। সাধারনত টাচস্ক্রীন ফোন এবং ট্যাবলেট পিসি এর জন্য অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপ করা হয়েছে। সিম্বিয়ান এবং উইন্ডোজ মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম এর সাথে প্রতিযোগিতার জন্য ২০০৩ সালে Andy Rubin, Rich Miner, Nick Sears এবং Chris White অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ডেভেলপ করার চেষ্টা চালান।
পরবর্তীতে ২০০৫ সালে গুগল এই অপারেটিং সিস্টেম টি কিনে নেয়। গুগল কিনে নেয়ার পর ও Rubin, Miner এবং Chris White গুগল এর সাথে থেকে যান এবং অ্যান্ড্রয়েড কে ডেভেলপ করার চেষ্টা চালিয়ে যান। মে ২০১৩ পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ৯০০ মিলিওন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস বিক্রি হয়েছে।

২) অ্যান্ড্রয়েড এর ভার্সনঃ 

অ্যান্ড্রয়েড এর ভার্সন গুলো দেখে নিন এক নজরে…
Cupcake: Android 1.5
Donut: Android 1.6
Eclair: Android 2.0, also 2.0.1 Android 2.1 Android 2.1-update1
Froyo: Android 2.2, also 2.2.x updates
Gingerbread: Android 2.3, also 2.3.x updates
Honeycomb: Android 3.0, also 3.0.x updates Android 3.1 Android 3.2
Ice Cream Sandwich: Android 4.0
Jelly Bean: Android 4.1 Android 4.2

৩) অ্যান্ড্রয়েড এর সুবিধাঃ

* মাল্টি টাস্কিং – যেমন আপনি গান শোনার সময় ও ফেসবুক ব্রাউজিং বা গেম খেলতে পারবেন।
* ইমেইল, ফেসবুক এবং টুইটার সহ যে কোন নোটিফিকেশন।
* নিজের মত করে ফোনে কে কাস্টমাইজ করার সুযোগ।
* রুট করার সুবিধা।
* কাস্টম রম ইন্সটল করার সুযোগ।
* লক্ষ লক্ষ অ্যাপ পাবেন প্লে স্টোর এ।
*হাজার হাজার থিম, ওয়ালপেপার, লাইভ ওয়ালপেপার

৪) রুট কি ?

– সাধারন অর্থে রুট বলতে আমরা বুঝি গাছের মাটির নিচের অংশ বা মূল। কিন্তু না বন্ধুরা অ্যান্ড্রয়েড রুট বলতে এমন কিছুই বুঝায় না। অ্যান্ড্রয়েড রুট হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনের এডমিন হওয়ার সুযোগ পাবেন। এতদিন আপনার ফোনের কন্ট্রোল ছিল গুগল এর কাছে। রুট করার মাধ্যমে আপনি হয়ে যাবেন আপনার ফোনের কন্ট্রোলার। রুট করার মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনে কাস্টম রম, কাস্টম কার্নেল, কাস্টম রিকভারি ইন্সটল করতে পারবেন।

৫) কাস্টম রম কি ?

কাস্টম রম হল অ্যান্ড্রয়েড বেজড কিছু কাস্টমাইজড অপারেটিং সিস্টেম। যেমন Samsung এর মূল ইউজার ইন্টারফেস হল এবং HTC এর ইউজার ইন্টারফেস হল । ঠিক তেমনি এই সব ইউজার ইন্টারফেস কে আরও কাস্টমাইজ করে এবং নানা রকম সুযোগ সুবিধা যোগ করে তৈরি করা হয় বিভিন্ন কাস্টম রম। যেমন Cyanogenmod, AoKp এর কাস্টম রম। আপনার ফোন অফিসিয়াল অ্যান্ড্রয়েড আপডেট না পেলেও রুট করে কাস্টম রম ইন্সটল করার মাধ্যমে আপনি আপডেটেড অ্যান্ড্রয়েড এর মজা নিতে পারবেন।

৬) রুট করার পর আপনি কি অফিসিয়াল আপডেট পাবেন ?

এর উত্তর দুইটি। প্রথম উত্তর না কারণ রুট করার পর আপনি আপনার ডিভাইস এ কোন প্রকার OTA (ওভার দা এয়ার) আপডেট পাবেন না। দ্বিতীয় উত্তর হল হ্যাঁ। কারণ OTA আপডেট না পেলেও আপনি ম্যানুয়ালি আপনার ডিভাইস এ রিলিজ পাওয়া অফিসিয়াল আপডেট ইন্সটল করতে পারবেন।

৭) রুট করার সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো কি ?

রুট করলে আপনি প্রথম যে সুবিধাটি ভোগ করতে পারছেন তা হচ্ছে যেকোনো বিশেষ অ্যাপস আপনি আপনার সেট এ ইন্সটল করে চালাতে পারবেন। আপনি রুট করার পর ইচ্ছা হলে অপ্রয়োজনীয় সিস্টেম অ্যাপস ডিলিট করে দিতে পারবেন। ভার্চুয়াল মেমোরি বাড়িয়ে নিতে পারবেন এবং সেই সাথে অ্যাপস স্টোরের সব পেইড গেমস ও চালাতে পারবেন।

কাস্টম রম ইন্সটল

আজকাল বিভিন্ন ফোরাম এবং ব্লগ সাইট গুলিতে গেলেই দেখা মেলে নানাবিধ অ্যান্ডড্রয়েড কাস্টম রম। সাধারণত অ্যান্ডড্রয়েড নিয়ে আগ্রহী ইউজাররাই এই সকল রম নিয়ে গবেষণা করেন। এই কাস্টম রমগুলির সবথেকে বড় সুবিধা হল এগুলি বিভিন্ন ভাবে টিউন করা যার ফলে পারফরম্যান্স স্টক রম থেকে অনেক সময় বেশ উন্নত থাকে। অ্যান্ডড্রয়েেডর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা মানা হয় তার ব্যাটারিকে এবং কাস্টম রম অনেক সময় এই দুর্বলতা দুর করতে পারঙ্গম।

কাস্টম কারনেল ব্যবহার

অ্যান্ডড্রয়েড ডিভাইস চালানর মূলে রম থাকলেও, কাজগুলোর কম্যান্ড করে কারনেল ফাইল। আপনি যখন আপনার ফোনে টাচ করেন বা ফোনটিকে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ঘোরান, তখন কার্নেল নির্দেশ করে অ্যাপ্লিকেশানকে। আপগ্রেড কার্নেল ব্যবহার করে আপনার ফোনের পারফরমান্স বাড়াতে পারেন।

ব্যাটারি এবং সিপিউ স্পিড

রুট করার পরে যদি কাস্টম রম ইন্সটল করেন তবে সিপিউ কিভাবে ব্যবহার করবেন তার কিছু অপশন পাবেন যেমন Governor, Performance ইত্যাদি। এগুলি ব্যাবহার করলে আপনার ফোনের স্পিড সর্বনিম্ন ব্যাটারি খরচে পেতে পারেন। এছাড়া Overclock এবং Underclock এর মাধ্যমে সিপিউ স্পিড মেন্টেন করতে পারবেন।
আরো কিছু অ্যাপস আছে যেগুলো দিয়ে আপনি ইচ্ছা মত সিপিউ ইউসেজ কন্ট্রোল করতে পারবেন।

• Set CPU
• No-frills CPU
• Tegrak Overlock

ইন্টারনাল Storage বাড়ানো

যাদের ফোনে ইন্টারনাল মেমোরি কম তারা চাইলে রুট করার মাধ্যমে যেকোনো অ্যাপ্লিকেশান SD কাের্ড ট্রান্সফার করে নিতে পারবেন। কিন্তু এই কাজটির জন্য রুট করা আবশ্যক। কিছু কিছু অ্যাপ্লিকেশান Storage ট্রান্সফার করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিলেও অনেক অ্যাপস আছে যেগুলো রুট করা ছাড়া ট্রান্সফার একরকম অসম্ভব। যেমন আপনি চাইছেন আপনার সেটে জেলিবিন আপডেট করবেন কিন্তু তার জন্য আপনি সেটের ডাটা ব্যাকআপ নিতে চাইছেন। এখন আপনি যদি ব্যাকাপ নেবার জন্য কোন বিশেষ অ্যাপস ইন্সটল করতে চান তার জন্য অবশ্যই আপনার সেটটিকে রুট করে নিতে হবে।

ব্যাকআপ তৈরি

রুট করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ব্যাকআপ তৈরি করা যেখান থেকে আপনি পরবর্তী যেকোনো সময়ে সিস্টেম রিস্টরের মত পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন। আর এটা বলা বাহুল্য যে সেট রুট না করলে আপনি কখনই সম্পূর্ণ ব্যাকআপ নিতে পারবেন না। আর এই ব্যাকআপটি এমনই যে আপনি যে অবস্থা থেকে ব্যাকআপ নিয়েছেন পরবর্তীতে ঠিক সেই অবস্থায় ফিরে যেতে পারবেন আপনার অ্যাপ্লিকেশান সেটিংস্‌ সহ।

রিস্ক ইন রুটিং

রুটিং এর রয়েছে নানাবিধ ঝামেলা এবং অসুবিধা। সাধারনত এক্সপার্টরা রুটিং করার পরামর্শ দেননা। আপনি যদি জানেন আপনার সেট রুট করা কেন দরকার, সেক্ষেত্রে আপনি রুট করার কথা ভাবতে পারেন।

ব্রিকিং অথবা ব্রিক দ্যা ডিভাইস

আপনি যদি রুট করতে গিয়ে আপনার ডিভাইসে ভুল রম ইন্সটল করেন যা আপনার ফোনের সাথে কম্প্যাটিবল নয় বা রুট প্রসেসের কোন ধাপ অসাবধানতায় মিস করেছেন অথবা রুট প্রসেসের মাঝপথে বিদ্যুৎ বিঘ্ন ঘটলে আপনার প্রিয় সেটটি একটি brick অথবা ইটের টুকরায় পরিনত হবে। Brick দুইভাবে হতে পারে, সফট ব্রিক অথবা হার্ড ব্রিক। সফট ব্রিকের ক্ষেত্রে তাও একটু আশা আছে, হার্ড ব্রিকের ক্ষেত্রে সেটাও ক্ষীণ।

ওয়ারেন্টি নষ্ট

সাধারনত কোন কোম্পানি চায়না তাদের ডিভাইসটা অন্যকেও কাসটমাইজ করুক। যার কারনে ওয়ারেন্টি থাকাকালীন সময়ে রুট করলে ডিভাইসের ওয়ারেন্টি ভয়েড হয়ে যেতে পারে।

স্লোস্পিড

স্পিড বাড়ানো যদিও রুট করা মূল উদ্দেশ্য, তারপরও অনেক সময় ডিভাইসের সমস্যার কারনে রুট করার ফলে স্পিড কমে যেতে পারে। এছাড়া ভাইরাস নামক যন্ত্রণাতো আছেই। কিন্তু কিছু পেতে গেলে কিছু ছাড় তো দিতেই হয়।

৮) রুট না করে কি কাস্টম রম ইন্সটল করা যাবে?

– না। রুট না করলে আপনি আপনার ডিভাইস এ কাস্টম রম ইন্সটল করতে পারবেন না। কাস্টম রম ইন্সটল করার জন্য কাস্টম রিকভারির প্রয়োজন হয়। র রিকভারি ইন্সটল করার জন্য রুট করা আবশ্যক।

৯) কাস্টম রিকভারি কি?

কাস্টম রিকভারি হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম জা আপনাকে আপনার ফোনের ব্যাক আপ রাখতে সাহায্য করবে। শুধু তাই নয় কাস্টম রম এবং বিভিন্ন কাস্টম মোডিফিকেশন ইন্সটল করতে আপনাকে সাহায্য করবে। রুট করে কাস্টম রিকভারি ইন্সটল করার পর ফোন রি-স্টার্ট করে আপনি রিকভারি মোড এ যেতে পারবেন।

১০) রম ফ্ল্যাশ করা মানে কি বুঝায় ?

– রম বা কাস্টম রম ফ্ল্যাশ করা মানে রিকভারি মোডের সাহায্যে আপনি আপনার ফোনে নতুন কাস্টম রম ইন্সটল করা বুঝায়।

১১) বুট লোডার কি ?

বুট লোডার হচ্ছে এক ধরনের কোড বা কমান্ড যা যে কোন অপারেটিং সিস্টেম কে চালু হতে সাহায্য করে। সব অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বুট লোডার দেয়া থাকে যা ফোনের অপারেটিং সিস্টেম কে নরমালি বুট হতে নির্দেশনা দেয়। আমরা সবাই জানি অ্যান্ড্রয়েড একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। যে কেউ এই সিস্টেম কে ডেভেলপ করতে পারে। তাই বিভিন্ন স্মার্টফোন কোম্পানি তাদের স্মার্টফোন গুলোর জন্য নিজস্ব বুট লোডার তৈরি করে। আপনি যাতে আপনার স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম টাকে নষ্ট না করে ফেলেন সে জন্য কোম্পানি গুলো বুট লোডার লক করে দেয় ।

১২) বুট লোডার আনলক না করে কি কাস্টম রম ইন্সটল করা যায় ?

– না। বুট লোডার আনলক না করে কাস্টম রম ইন্সটল করা যাবে না। কাস্টম রম ইন্সটল করার জন্য বুট লোডার আনলক করা জরুরি।

১৩) স্মার্টফোন কি ব্রিক হয়? কিভাবে ব্রিক হয় ?

– হ্যাঁ, স্মার্টফোন ব্রিক হয়। আপনার ফোন টি ব্রিক হতে পারে যদি ফোন রুট বা রম ইন্সটল করার সময় রুট বা ইন্সটল প্রসেস কোন কারনে বাধা পায়। এছাড়া ভুল কাস্টম কার্নেল ইন্সটল করলেও আপনার ফোন টি ব্রিক হতে পারে